যত দূর মনে পড়ে তখন আমার বয়স ৩ কি ৪ বছর। স্কুলে তখনও ভর্তি হই নাই। থাকতাম বগুড়া শহরের সদরেই। মার্কিন মুলুকের নাম সেই ছোট বেলা থেকেই শুনতাম। ডিভি লটারি! উহু! আমার বাবাও মনে হয় ২-৪ বার আবেদন করছিলো ডিভি লটারিতে =D তখন সেই ছোট বয়সেই মার্কিন মুলুকে যাওয়ার জন্য বিমানে টিকিট কেটে ফেলি চকচকা ২০ টাকার নোট দিয়ে ;P সুন্দর করে একটি চিঠির লম্বা খামে ভরে রেখে দিই। কোথা থেকে সেই ২০ টাকা যোগাড় করছিলাম তা নিজেও এখন মনে করতে পারব না। হঠাৎ একদিন মা ড্রয়ার পরিস্কার করতে করতে পুরোনো খাম ছিঁড়তে থাকে। ছিঁড়তে ছিঁড়তে সেই খামটিও ছিঁড়ে ফেলে তারপর আসামী ধরা পড়লো 😉 কে কে করছে কে? বাড়ি আমার ছাড়া আর কারই এই কাজটি করার কথা নাহ। ব্যাস ধরা হল আসামী =D জিঙ্গাসাবাদ চলল। জিঙ্গাসাবাদের এক পর্যায়ে বললাম মা আমি তো এটা তো আমেরিকার টিকিট কাটছি =D শুনে আর মা আমারে মার ধর করে নাই। পরে নোটটা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাল্টিয়ে নিয়ে আসছিলো মনে হয়।
আসলে তখনকার বয়সে বিমান কি আর বিমানে চড়াটাও মনে হয় আমার কাছে ছিলো স্বপ্নের মত। এখনও পরিস্কার মনে পড়ে স্কুলে থাকলে বন্ধু সৌমিক সাদমানের কাছে থেকে বিমানে চড়ার গল্প শুনতাম =D ওর বাবা বিমান বাহিনীতে চাকরি করত সে সুবাদে ওরও কয়েকবার বিমানে চড়ার সুযোগ হয়েছিলো।
বিমানে চড়ার চিন্তা না করলেও H.S.C. পরীক্ষার পর পার্সপোর্ট করে ফেলি কারণ বাড়ির পাশেই ছিলো পার্সপোর্ট অফিস। সেই দিনটা এখনও পরিস্কার পার্সপোর্ট ডেলিভারির মেসেজ পেয়ে হাফ প্যান্ট পরেই দৌড় পার্সপোর্ট নিতে =D
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। ১ম বর্ষ শেষ ২য় বর্ষের ক্লাস চলে। ২০১ এর ল্যাবে বসে আছি। হঠাৎ করে Mozilla Bangladesh এর বেলায়েত ভাই মেসেজ দিয়ে বসল আমরা দিল্লীতে যাচ্ছি আগামী মাসে তুমি যাবে আমাদের সাথে? তোমার পার্সপোর্ট আছে? ব্যাস আমি তো নাচানাচি শুরু করে দিলাম। সাথে সাথেই ল্যাব থেকে বের হয়ে ভাইকে ফোন হ্যাঁ ভাই আমি পারব! তারপর ভাই আমার নাম Suggest করে দিলো। Mozilla থেকে Invitation letter, Flight ticket, Hotel Booking সব পাঠায়ে দিলো। জীবনের প্রথম বিমান টিকিট পেয়ে তো আমি আনন্দে আত্নহারা। Dhaka-Delhi-Dhaka by Jet Airways। তখন Jet Airways এর Dhaka-Delhi সরাসরি ফ্লাইট চলত। জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমণ তাও Fully Funded by Mozilla এটা ভাবতেও পারি নাই!
ব্যাস শুরু হল এবার ভিসা করার পালা। তখন ভারতীয় ভিসা মানেই এক বিভীষিকার নাম! টোকেন দিয়ে সিরিয়াল নিতে হয়। ওয়েবসাইট ঘেঁটে বের করলাম Conference Visa এর কোন টোকেন বা সিরিয়াল লাগে না। ব্যাস কাগজ পত্র রেডি করে ফেলতে লাগলাম। Department থেকে Leave of absence, NOC নিয়ে ফেললাম। ছিলেন শরীফ স্যার। স্যার তো Leave of absence নিয়ে যেতেই কেটে ছেঁটে দিয়ে বললেন ঠিক করে নিয়ে এসো। এত ভালো জায়গায় যাবা ভুল থাকলে চলবে? ঠিক ঠাক করে সব রেডি করে নিয়ে গেলাম স্যারের কাছে। স্যার সব সই দিয়ে দিলো।বন্ধু শান্তনুর বেশ সাহায্য করেছিলো সব কিছু রেডি করতে। সব রেডি করে নিয়ে গেলাম IVAC, Gulshan এ। তখন ওখানেই ৬০০ টাকা জমা নিতে। জমা দিয়ে দিলাম। দিয়ে চ্যাল চ্যালায়ে জমা দিয়ে দিলাম। ৭ দিন পর মনে হয় ভিসাও পেয়েও গেলাম।
এরপর সেই কাঙ্কিত দিন! Sep 23, 2016! প্লেনে উঠব! সকাল ১০:১০ এ ফ্লাইট আমি তো ৬ টার ভিতরই হাজির এয়ারপোর্ট। এখনও মনে পড়ে আমার পার্টনার খালিদ ভাইয়ের কাছে লাগেজ দিয়ে এয়ারপোর্টের পার্কিং এ মূত্র বিসর্জন দিতে গেছিলাম ;p ৫ টাকা দিয়ে তাও। ভিতরে গেলে টয়লেট করতে পারব আরামে ফ্রিতে সেটাও জানতাম না :3
তবে আমার কোন কিছু সমস্যা হয় নাই কারণ সাথে ছিলেন Mozilla Bangladesh এর অভিজ্ঞ ম্যাক ভাই ও বেলায়েত ভাই। তারা এয়ারে ভ্রমণে বিশাল অভিজ্ঞ মানুষ =D তখন Departure Board, চেক ইন কাউন্টার, ইমিগ্রেশন এসব কি তা ভুলেও জানতাম না। Youtube এর ভিডিও দেখারও বুদ্ধি হয় নাই তখন। আমার পার্টনার খালিদ ভাইয়েরও প্রথম বিমান ভ্রমণ ছিলো ওটা। আমরা Jet Airways এর Flight No. 9W 271 এ উঠে পড়লাম। বিমান ছাড়ল সময় মতনই। সেই রকম অনুভূতি Take off এর সময়। উপরে উঠার পর কানের বারোটা বাজা শুরু হলো কান মনে হয় ইঞ্জিনের শব্দে যায় যায়। ফ্লাইটে আমরা ছবি তুলা বাদ দিলাম না।
দুর্ভাগ্য বসত হোক আর যাই হোক তখন Window seat কি এটাও বুঝতাম না। বললে হয়ত করে দিতে। কিন্তু প্রথম বলে কথা =D দিল্লী এয়ার পোর্টে প্রায় ৩ ঘন্টা পর ল্যান্ড করল। সেদিন মনে হয় Air traffic jam ছিলো তার বাড়তি কিছুক্ষণ দিল্লীর আকাশে চক্কর দেয় আমাদের ফ্লাইট।
বিমান থেকে নেমে আমি আর কানে কিছু শুনি না :3 অনেক গুতা গুতি করে কান স্বাভাবিক করছিলাম।
এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়েও ছবি তুলতে ভুলি নাই। ব্যাস এই হল আমার প্রথম বিমান বিমান ভ্রমণ! প্রথম বিদেশ সফর With Mozilla। সারা জীবন মনে থাকবে যদিও এখন পর্যন্ত ১৪ বার বিভিন্ন ফ্লাইটে উঠেছি =D জীবনে হয়ত আরও চড়ব কিন্তু Jet Airways এর সাথে যাত্রাটা ভুলব না। যদিও এখন Jet Airways ও গত হয়ে গেছে :/ যদিও এখনও ছোট বেলার মার্কিন মুলুকে যাওয়ার স্বাদ এখনও পূরণ হয় নাই। ওটাও হয়ত হয়ে যাব একদিন নিজ যোগ্যতায় =D
শুভ কামনা সব বিমান যাত্রীদের জন্য। ফ্লাইটে ভ্রমণ করে অনুগ্রহ করে কোন ময়লা করবেন না বিশেষ করে প্লাস্টিক প্যাকেট কিংবা খাবার ফেলবে না ভুলেও। প্লিজ সব ভ্রমণ কারীদের কাছে অনুরোধ থাকল।