অনেক ছোট কাল থেকে আমার শখ বেশ চিপা চাপা দিয়ে ভালো কিছু কাজের মানুষকে ফলো কার। এটার খবর তো সেভাবে পেয়ে গেলাম। International Youth Committee অনেক ধন্যবাদ সুযোগ টা এত সহজে দেওয়ার জন্য।
নির্বাচনের অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে শেষ ধাপ আসল ভিসা। আমার কয়েকটা দেশে ভিসা লাগাতর বাতিল হচ্ছিল খুব টেনশনে ছিলাম। মালয়েশিয়া এম্বসির লিস্টেড বৈধ একটা ট্রাভেল এজেন্সি দিয়ে ভিসা আবেদন জমা দিলাম। জমা দিতে আমার যা যা লেগেছিলঃ
আবেদন জমা দেওয়ার পর হাইকমিশন থেকে ফোন দেয়। আমি যথারীতি ফোন ধরি নাই। ঘুমাচ্ছিলাম! অনেক চিন্তায় ছিলাম। ভিসা দেয় কিনা। কয়েকদিন পরে এজেন্সি জানাই ভিসা হয়ে গেছে। আমি তো মহা খুশি 😉
আমি আগে দিল্লী, কলকাতায় বিমানে গেলেও কখনো টিকিট কাটি নাই। Mozilla সব করে দিত। এবার নতুন অভিজ্ঞতা। বেশ কয়েক জায়গায় ঘুরলাম কেউই টিকিট ২৩,০০০ টাকার নিচে করে দিতে পারে না। অবশেষে Airasia এর টিকিট কাটলাম এক এজেন্সি থেকে ২৩,০০০ টাকা দিয়ে। অথচ সে টিকিট expedia.com থেকে করলে ২০০ ডলারে পেতাম। আমি ভয়ে কাটি নাই। পার্থক্য একটাই ২৩,০০০ দিয়ে কিনলে খাবার দিবে আর ২০০ ডলারে কিনলে খাবার দিবে না। আর তারিখ পাল্টাতে কিংবা রিফন্ডে ঝামেলা হয়। যে কেউ AirAsia GSA Bangladesh এর সাইটও দেখতে পারেন ওদের বিভিন্ন অফার থাকে।
এবার এপ্রিলে ২২ তারিখ উড়ার পালা। আমার Payoneer Master card এ ডলার ভরা ছিল। আর হাতে 400 RM নিয়েই রওনা হলাম। খেলা হবে 😉
Day -1 KLIA2 বিমানবন্দরে নেমেই একটা আকাম করে ফেললাম। টয়লেটে ঢুকছি বের হওয়ার সময় দেখি দরজা লক! আর খোলে না! বিশাল বিপদ। ১-২ মিনিট Help! Help! করে চিল্লানোর পর এক ক্লিনার এসে খুলে দিল। বাঁচলাম! বের হয়েই ছুটলাম ইমিগ্রশনের দিকে। পথে সিমের দোকান পেলারম ৩৫ রিঙ্গিত দিয়ে u Mobile এর সিম আললিমিটেড ইন্টারনেটের সিম কিনলাম। কিন্তু মাগার বহুত চিটিং বাজ। ২ জিবি যাওয়ার পর কয় তোমার ইন্টারনেট শেষ! আমি আর কোন দিন আললিমিটেড কোন প্যাকেজ কিনব না। যদিও সে এয়ারপোর্ট এর ইমিগ্রশন চ্যানেল পার হলে 32.5 RM এ কেনা যেতো।
ইমিগ্রশনে বিশাল লাইন! শেষ করতে ২ ঘন্টা লেগে গেল। আমি তো ব্যাগেজের চিন্তায় অস্থির। কারণ বোর্ড এ Ak70 Dhaka পার হয়ে চেন্নাই পার হয়ে অন্যটা চলে। ইমিগ্রশন শেষ করে এসে দেখি লাগেজ সাইডে সাইট করে রাখা! আমার খুশি দেখে কে? এবার লাগেজ নিয়েই ছুট বাইরে।
আমি তো ভিতর থেকে ভাবতেছি ১০ RM দিয়ে বাসে করে যাব শহরে। বের হয়ে আমার চোখ তো কপালে! আবদাল্লাহ নামে এক স্বেচ্ছাসেবক দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্য! আমার খুশি আরও দেখে কে! আমি রাভির (আমাদের এক ভারতীয় অংশগ্রহণকারী) জন্য অপেক্ষা করলাম। কারণ আমাদের ফ্লাইট টাইম প্রায়ই একই ছিল। আমি KFC তে একটু ঢুকে কফি খেয়ে নিলাম। ব্যাশ আমরা পরে রবিকে পেয়ে রওনা দিলাম গাড়ি করে।
Day-2 আমাদের কনফারেন্স শুরু। শুরুতেই Ice Breaking Session। বেশ মজা করলাম এবং অনেক কিছু শিখলাম। সম্মেলনটি Malaysian Ministry of Youth and Sports (KBS) এর উদ্যোগে আয়োজন করেছিল International Youth Centre and International Youth Committee। সম্মেলনটির মূল প্রতিপাদ্য ছিল “Urban Resilience to Enhance International Youth Centres”। সম্মেলনটিতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন Dr. Mohamed Maliki B. Mohamed Rapiee এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন Malaysian Ministry of Youth and Sports (KBS) এর মাননীয় উপ মহাসচিব Datuk M. Noor Azman Bin Taib। অন্যান্য বক্তদের মধ্যে ছিলেন International Youth Committee এর চেয়ারম্যান Dr. KK Sing, Youth Center — Bhutan এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক Kinley Phub, United Nations in the Philippines এর Youth Advisory Board এর সদস্য Regine Borja Guevara। Kinley Phub মূলত Roles & Resources in the Governance of Youth Centre নিয়ে বললেন। Kinley Phub ভূটানের Youth Center নিয়ে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরলেন। বিশেষত Youth Center গুলো Decentralized এর ব্যাপারে। এটা আমাদের বাংলাদেশের জন্যও দরকার। কিভাবে ওদের Youth Center এ স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করা যায়। স্থানীয় জনগনকে কিভাবে আরও যুক্ত করা যায় এসব অনেক কিছু নিয়েই বললেন। তারা ভূটানে Youth Festival, Mega Youth Event এসব করে। আমাদের বাংলাদেশেও সরকরী উদ্যোগে এসব করা দরকার বলে আমি মনে করি।
Regine Borja Guevara সেশনটি ছিল Profesionalism of in the Management & Delivery of Youth Programmes of a Youth Centre। বেশ তথ্য বহুল সেশন ছিল। সেখান থেকেই জানতে পারলাম UN এর সাথে কিভাবে যুক্ত হওয়া যায়।
তারপরে সেশন ছিল Development of Professional Human Capital For Youth Centre নিয়ে KK Singh এর। KK Singh এর কাজ নিয়ে বেশ কিছু তথ্য জানলাম।
প্রথম দিন শেষে ঘুরতে বের হলাম। মাথায় ঢাকা থেকেই একটা ভূত আছে Petronas Twin Tower এর ব্রিজে উঠব। গেলাম যথারীতি ৯ টার দিকে বন্ধ হয়ে গেছে! শেষ মেষ ছবি তুলে ঘুরে চলে আসলাম।
Day-3: দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই ছিল Ice Breaking Session। সবচেয়ে মজার ছিল কার্ড সেশনে Ruby Shah নামে এক নেপালি মেয়ের কথা শুনে। প্রশ্নটি ছিল তোমার প্রিয় পোষা প্রানী কি? তার উত্তর ছিল “I love Gorilla”। আমি মনে হয় কোন দিন এটা ভুলব না। আরেকটা মজার কান্ড ঘটিয়েছিলাম আমি প্রশিক্ষক একটি Straw দিয়ে আমাদের সাথে খেলছিলেন। চোখ বন্ধ করতে বলছিলেন আর ওটা লুকাচ্ছিলেন। এরপর গোল হয়ে দাড়িয়ে খুঁজে বের করতে হবে কোথায় সেটা। শেষ বার আমি ব্যর্থ হলাম কারণ সে Out of box চিন্তা করতে বলছিলেন আর আমি পারি নাই। আসলে সে তার কানের উপর রাখছিলেন আমি দেখি নাই। আমার জন্য সবাই বেশ মজা পেয়েছিলো বটে!
তারপর ছিল আমাদের Concurrent Sessions সেশন। বাংলাদেশ টিম থেকে আমি “Churning butter from the ocean of information for Youth” এই শিরোনামে একটা সেশন নেই। বেশ প্রসংশা পাই কারণ সেশনটা পুরোটাই তথ্যবহুল ছিল। আমাদের অংশগ্রহণ কারীদের অনেকেই ছোট করে সেশন নেয়। বেশ মজার ছিল। কারণ অনেকের অনেক কাজ সম্বন্ধে আমরা জানতে পারছিলাম।
Day-4 ফিল্ড ভ্রমণের মধ্য ছিল একটি ইয়ুথ সেন্টার ভ্রমণ। পারোই নামে একটা সিটিতে একটা Youth Center ভ্রমণ।
এরপর 4:30 pm এর ভিতর আমরা International Youth Centre এর ফিরে আসি। এবং আমাদের Closing Ceremony এর জন্য প্রস্তুতি নেই। সম্মেলনটিতে সমাপনী দিনে উপস্থিত ছিলেন Malaysian Ministry of Youth and Sports (KBS) এর মাননীয় মন্ত্রী Syed Saddiq Bin Syed Abdul Rahman। উল্লেখ্য বর্তমানে তিনি একজন সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী এবং বিখ্যাত বিতার্কিক। তিনি বলেন, “যুবকদের অবশ্যই শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিজেদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। যুবকরা শুধু আগামী দিনের নেতৃত্ব দিবে না, তারা বর্তমানে প্রজন্মেরও নেতা।”
Day-5 এ আমাদের ছিল City Tour। City Tour এর মধ্যে ছিল Putrajaya, Cyberjaya ভ্রমণ।
Institutional Visit এর মধ্যে ছিল Harriston চকলেট কোম্পানি ভ্রমণ। বেশ কিছু চকলেট কিনি আমি। চকলেট দেখে আমি প্রায় ভুলে গিয়েছিলাম আমার পকেটে কত টাকা আছে। এরপর আবার তৃতীয় দিনের মত বিকাল ৪ টা বাজে প্রায় KLCC তে হানা দিলাম। উদ্দেশ্য একই ব্রিজের টিকিট কাটা। যথারীতি ব্যর্থ। আমি মনে দুঃখে SAMSUNG A30 ফোন কিনলাম ৭৯৯ RM দিয়ে কারণ দেশে দাম ছিল ২৪,০০০ টাকা প্রায়। এবার লাভ করলাম 😉 ৮ হাজার টাকা বাঁচালাম 😉
Day -6: IYC Day ছিল। তাদের স্থানীয় অংশগ্রহণ কারীদের জন্য। আমি অংশ নেই নাই। আমি সকাল বেলা নাস্তা করেই Grab নিয়ে দৌড় দিলাম টিকেট কাটতে। সবচেয়ে মজার ছিল এটা। অনলাইনে টিকিট পাওয়া যায় ৮০ RM এর টিকিট 120 RM নেয় তাও 6:15–8:30 এই পিক টাইমের টিকিট পাওয়া যাবে না। এটা Walk-In টিকিট। লাইনে দাঁড়ায়ে সকাল বেলা কিনতে হবে।
আমি 6:30 PM এর টিকিট পেলাম। আমি খুশি আর দেখে কে! চতুর্থবারের চেস্টায় সফল! টিকিট কিনে নিয়ে বের হলাম ঘুরতে। বলা ভাল Kuala Lumpur সিটিতে gokl এর ৪ রং (Green, Purple, Blue, Red) এর বাস চলে যা পুরো ফ্রি!
বাসগুলো এত সুন্দর তা বলে বোঝানো যাবে না। Wifi ও আছে 😉 আমি বাসে করে Bukit Bintang এ গেলাম। সেখান থেকে আমার এক বন্ধুর কাছে গেলাম। IKEA এর শোরুমে গিয়ে তার দেখা পেলাম। ওখান থেকে কিছু কেনা কাটা করে ওর বাসা গেলাম। বাসা থেকে ফেরার পথে ওর অফিস Mercedes Benz Malaysia তেও গেলাম। ও ওখানে ইন্টার্ন হিসাবে কাজ করে।
বন্ধু সাকিব আমাকে MRT ট্রেন ধরে দেয় KLCC তে আসার জন্য। আমার Show 6:30 PM এ। আমি কাটায় কাটায় ৬ টায় এসে পৌছালাম।বলা ভালো মালয়েশিয়াতে কম টাকায় চলাচলের জন্য LRT, MRT, MonoRail এর বিকল্প নেই। এসে হাসান ভাইকে ফোন দিয়ে লাইনে দাড়ালাম টাওয়ারে উঠার জন্য। টাওয়ারের ব্রিজে উঠে আমার খুশি আর দেখে কে!
৮৩ তালাতে সবচেয়ে মজার ছিল Souvenir কয়েন বানানোর মেশিন। আপনার সামনেই বানিয়ে দিবে। টাওয়ার দেখা শেষ করে রাতে তাড়াতাড়িই ফিরলাম IYC তে। কারণ পরে দিন আমার ফ্লাইট। ঘুম দিলাম বেশ আরামে। পরের দিন দুপুরে খেয়েই 4:00 PM এ বের হলাম এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্য। এয়ার পোর্ট এ যখন আসি তখন পকেটে 22 RM। ব্যাশ চেক ইন করার আগে McDonald’s এ 22.95 RM এ খাইলাম। 0.95 RM দিলাম কার্ড দিয়ে 😉 এবার সব শেষে বাড়ি ফেরার পালা।
আসার আগে একটি চমৎকার কাজ করে আসলাম। সবাইকে বাংলাদশী ২ টাকার নোট দিয়ে আসলাম। আর বলে আসলাম বাংলাদেশে আসার কথা। আরও বললাম তোমাকে যে নোট টা দিয়েছি তা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নোট 🙂
সম্মেলনটি থেকে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা পেলাম। কিভাবে অচেনা জায়গায় Internet ব্যবহার করে, একটু আধটু English ব্যবহার করে চলতে হয়। কিভাবে নতুন নতুন সুযোগ খুঁজতে হয় তাও জানলাম বিভিন্ন ভাবে।
উল্লেখ্য সম্মেলনটি ১২ টি দেশের তরুণ অংশ নেয়। সম্মেলনটিতে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সেক্টরের ১৪ জন তরুণ অংশ নেয়।