বর্তমান বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর বেশির ভাগ শিক্ষার্থী আসে শহর অঞ্চলের বাইরে থেকে। তাই তাদের স্কুল, কলেজ জীবনে এক্সট্রাকরিকুলার কাজগুলো করার সুযোগ অনেক কম থাকে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় জীবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন শিক্ষার্থীর জন্য। এটা এতটা গুরুত্বপূর্ণ যে চাকরি জীবনে এটা বেশ ভাল করে দেখা হয়। আমার আজকের লেখা বিজ্ঞান, ব্যবসা, কলা তিন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য লেখা।
প্রথমেই আসি কলা বিভাগ। কলা বিভাগের একজন শিক্ষর্থীর স্বপ্ন থাকে সংবাদ পাঠক, নাট্যজগত কিংবা কর্পোরেট জগৎ। কিভাবে সে নিজেকে গড়ে তুলতে পারো? সত্যি বড় প্রশ্ন!
কলা বিভাগের একজন শিক্ষার্থী নিজেকে নাট্য সংগঠন, অাবৃত্তি, বির্তক,সংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্লাব, সাংবাদ সমিতি এসব ক্লাবের সাথে যুক্ত হতে পারে। এসবের মাধ্যমে সে নিজেকে খুব ভাল করে গড়ে তুলতে পারে। যা তার ভবিষ্যত জীবনেও বেশ ভাল সহায়তা করবে।
ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীরা ব্যবসা সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পারে। বর্তমান বাংলাদেশে Model United Nation এর অনেক ক্লাব আছে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীরা এসবের সাথে যুক্ত হতে পারে। হলে তাদের উপস্থাপনার ক্ষমতা, কথা বলার ভঙ্গি এসব বেশ ভাল করে উন্নত করতে পারবে। এছাড়াও সে বিভিন্ন প্রতিযোগী যা ব্যবসা সংক্রান্ত হয়। সেসব এ অংশ নিয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে।
বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিজ্ঞান ক্লাবের সাথে যুক্ত হতে পারে। তবে বিজ্ঞান বিষয় অনেক। এক্ষেত্রে বিষয় বিত্তিক বলা ভাল।
CSE/EEE/ECE এর শিক্ষার্থীরা প্রোগামিং ক্লাবের সাথে যুক্ত হয়ে ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে পারো। Open Source Project এ কাজ করে নিজের প্রোফাইল সমৃদ্ধ করতে পারে। এছাড়াও বাংলাদেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সংগঠনিক কাজ হয় যেমন Mozilla এর Mozilla Bangladesh, Google এর Google Developer Group Dhaka/Sonargoan, Google Local Guides, Google Business Group, Google Education Group, IEEE এর বিভিন্ন ক্যাম্পাসের চ্যাপটার, Wikipedia, Microsoft Student Partner। এছাড়াও অনেক টেকনিক্যাল সংগঠন আছে।
অন্য প্রকৌশলী বিষয়গুলোর শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে সেই বিষয় সংশ্লিষ্ট ক্লাবের অংশ হতে পারে। এছাড়াও বাংলাদেশে Bangladesh Open source network, বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি সহ অনেক সংগঠন রয়েছে যারা বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে।
স্নাতকে থেকেই যে কোন শিক্ষার্থী গবেষণাও করতে পারে। সে সংক্রান্ত পেপার , পোস্টার পাবলিশ করে যে কোন কনফারেন্স এ অংশ নিতে পারে।
এবার আসি সবাই কাজ করতে পারে এমন সংগঠনের কথায়। প্রথমেই আসি রক্ত দান নিয়ে সংগঠনের কথায়। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা ক্যাম্পাসেই রক্তদান নিয়ে কোন কোন সংগঠন কাজ করে। জাবি, ঢাবি, বুয়েটে কাজ করে বাঁধন। যে কোন সুস্থ মানুষই এসবের সদস্য হতে পারে। দেখবে এত যুক্ত হলে দেখা যাবে সে সহজে কোন নেশা জাতীয় দ্রব্য নিতে সংকচ বোধ করবে। এবং তার সুস্থতা পরীক্ষাও নিয়মিত ভিত্তিতে হবে।
স্কাউট/ Bangladesh National Cadet Corps এটাও মোটামুটি বাংলাদেশের সব ক্যাম্পাসেই আছে। যে কোন শিক্ষার্থীই এটার সদস্য হতে পারে। নিজের মধ্যে লেখাপড়া পাশাপাশি নেতৃত্ববোধ জাগাতে বেশ ভাল ভূমিকা রাখে।
যাদের ইচ্ছা সংবাদ মাধ্যম নিয়ে কাজ করার তারা তাদের ক্যাম্পাসের সংবাদ সমিতির সাথে যুক্ত হতে পারে। সংবাদ সমিতি একজন শিক্ষার্থীর জীবন গড়তে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ছবি তুলতে যারা ভালবাসে তাদের জন্য আছে ফটোগ্রাফি ক্লাব। বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ফটোগ্রাফি ক্লাব আছে।
বর্তমান বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই Career Club আছে এসব এও যুক্ত হয়ে নিজের বিভিন্ন দক্ষতা বাড়াতে পারে।
এসব ছাড়াও রয়েছে রাজনৈতিক সংগঠন। যাদের ইচ্ছা ভবিষ্যতে রাজনীতি করা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোতে কাজ করতে পারে। একটি রাজনৈতিক সংগঠন থেকে অনেক কিছু শিক্ষার আছে। তবে আমাদের বাংলাদেশে রাজনীতিকে খারাপ হিসেবেই দেখা হয়। তবে নিজের মত করে নিতে পারলে এ থেকেও অনেক কিছু শিক্ষার আছে।
খেলাধুলাও অন্যতম একটি Extracurricular Activity। খেলাধুলার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকতে পারে। নিজের বিভাগের/বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় টিমের অংশ হওয়া এটা বেশ বড় একটা কাজ।
সংগঠন ছাড়াও একজন শিক্ষার্থী বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগামে অংশ নিয়েই নিজেকে তৈরি করতে পারে ভবিষ্যতের জন্য। লিডারশিপ, সফট স্কিল এসব নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানই প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে।
এজন্য একজন শিক্ষার্থীর উচিত সে প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সাথে সাথেই ক্যাম্পাসে কোথায় কোন সংগঠন/ক্লাব আছে তা জানা। তার পঠিত বিষয় সংক্রান্ত দেশে কি কি সংগঠন কাজ করে এমনকি বিদেশেও তা খুঁজে বের করে সেসবের সাথে যুক্ত হওয়া। শুধু পঠিত বিষয় নিয়ে পড়ে থাকলে দেখা যাবে চাকরি যাওয়ার সময় তার Extracurricular Activities অংশটি ফাঁকাই রাখতে হতে পারে।
তবে এসব সবই লেখাপড়ার পাশাপাশি কোন ভাবেই লেখাপড়াকে ক্ষতি করে না। প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই উচিত নিজের ক্লাসে সব সময় উপস্থিত হওয়া এবং পরীক্ষা যথা সময়ে দেওয়া। কারণ লেখাপড়া তার শিক্ষাজীবনে সব চেয়ে বড় কাজ। তবে কারও নিজের সবজেক্ট পছন্দ না হলে সে কথা ভিন্ন।
শেষকথা, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যেভাবেই হোক তোমাকে এগিয়ে যেতে হবে। সেটা হামাগুড়ি দিয়ে হোক আর বুলেট গতি হোক না কেন 🙂